বাংলাদেশের শ্রম রপ্তানি ৩ বছর পর ১০ লাখ ছাড়িয়ে, রেকর্ড রেমিটেন্স অর্জন
বাংলাদেশের শ্রম রপ্তানি ৩ বছর পরপর ১০ লাখ ছাড়িয়ে
ঢাকা: বাংলাদেশ গত তিন বছরে পরপর ১০ লাখের বেশি শ্রমিক বিদেশে রপ্তানি করেছে, যা দেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। ২০২৪ সালে মোট ১০,১১,৮৫৬ জন শ্রমিক বিদেশে কর্মসংস্থানে নিয়োজিত হয়েছেন, যা দেশের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ বার্ষিক সংখ্যা।
এ বছর বাংলাদেশের রেমিটেন্সও একটি নজির স্থাপন করেছে, যা মোট ২৬.৮৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বুরো অফ ম্যানপাওয়ার, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (BMET) এর তথ্যমতে, সৌদি আরব ছিল প্রধান গন্তব্য, যেখানে একক বছরে ৬২৮,০০০ শ্রমিক রপ্তানি হয়েছে—এটি যেকোনো দেশের জন্য একক বছরে সর্বোচ্চ।
সৌদি আরবে রেকর্ড পরিমাণ কর্মী নিয়োগ
২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে মাত্র ৮৬,৮৬৬ জন বাংলাদেশি শ্রমিক সৌদি আরবে অভিবাসন করেছেন, যা গত ৪৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ নিয়োগ।
ভুয়া চাকরি প্রস্তাব এবং অনিয়মের চ্যালেঞ্জ
এতসব সাফল্য সত্ত্বেও কিছু সমস্যাও দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে কর্মসংস্থান প্রক্রিয়ায় প্রতারণা এবং চাকরি প্রস্তাবের সাথে সম্পর্কিত। ২০২৪ সালে ৫,০০০ এর বেশি অভিযোগ পেয়েছে BMET, যেখানে শ্রমিকরা সৌদি আরবে ভুয়া চাকরি প্রস্তাব এবং iqama (কর্ম অনুমতি) পেতে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।
এদেশের শ্রম বাজারের জন্য বৈচিত্র্যকরণের প্রয়োজনীয়তা
বাংলাদেশের শ্রম অভিবাসন প্রধানত ৬টি দেশে কেন্দ্রীভূত—সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত এবং জর্ডান। ২০২৪ সালে মোট শ্রমিকদের ৯০% এই ৬টি দেশে গেছেন। যদিও সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ এর মাধ্যমে অনেক কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তবুও বিশ্লেষকরা নতুন বাজারের সন্ধান এবং ঐতিহ্যবাহী বাজারগুলোর পুনরুজ্জীবন প্রয়োজন বলে মনে করছেন।
গুণগত দক্ষতা এবং মহিলা অভিবাসনের উদ্বেগ
২০২৪ সালে দক্ষ শ্রমিকদের সংখ্যা কমে যাওয়ার পাশাপাশি, অদক্ষ শ্রমিকদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। নারী শ্রমিকদের অভিবাসনও গত দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন হয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৫৪,৬৯৬ জন নারী অভিবাসন করেছেন, যা মোট অভিবাসনের মাত্র ৬.০৩%।
ভবিষ্যত সম্ভাবনা এবং সতর্কতা
যদিও ২০২৪ সালে বিদেশে কর্মী রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ২২% কমে গেছে, তবুও কোভিড-১৯ এর আগে প্রতি বছর ৬০০,০০০ থেকে ৭০০,০০০ কর্মী রপ্তানি হওয়া তুলনায় এটি এখনও অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি অবৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়া এবং বাজারের উপর নির্ভরতা সমাধান না করা হয়, তবে এই প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশের শ্রম বাজারের ভবিষ্যত সাফল্য নিশ্চিত করতে বাজার বৈচিত্র্যকরণ, দক্ষ শ্রমিকদের উৎসাহিত করা এবং সঠিক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।